সমাজসেবা অধিদপ্তর সরকারের অন্যান্য জাতিগঠনমূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম। ১৯৫৫ সালে দেশে সমাজকল্যাণ কার্যক্রম শুরু হলেও ১৯৬১ সালে সমাজসেবা পরিদফতরের সৃষ্টি হয়। ষাটের দশকের    সৃষ্টিকৃত পরিদফতরটিই আজ সমাজসেবা অধিদফতরে উন্নীত হয়েছে। এ অধিদপ্তরের কার্যক্রম প্রথম দিকে ছিল শহরভিত্তিক এবং সেবামূলক। সময়ের প্রেক্ষাপটে বর্তমানে এ অধিদপ্তরের কার্যক্রম দেশব্যাপী তৃণমূল পর্যায়ে বিস্তৃতি লাভ করেছে।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়াধীন সমাজসেবা অধিদপ্তর দেশের দুস্থ, অবহেলিত, পশ্চাৎপদ, দরিদ্র, এতিম, অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী এবং সমাজের অনগ্রসর মানুষের কল্যাণ ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে ব্যাপক ও বহুমুখী কর্মসূচি নিয়ে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সুদৃঢ়করণের লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

 

যেমনঃ-

  • ক্যান্সার, কিডনী, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড, জন্মগত হৃদরোগ এবং থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের আর্থিক সহায়তা কর্মসূচি
  • চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি
  • প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ
  • হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি
  • বেদে জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি
  • ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান
  • অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি
  • বয়স্ক ভাতা
  • বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত ভাতা
  • অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা
  • মুক্তিযুদ্ধ ভাতা

Fb- We can get services from the Department of Social Services_ English..jpg

 

ক্যান্সার, কিডনী, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড, জন্মগত হৃদরোগ এবং থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের আর্থিক সহায়তা কর্মসূচি:

প্রতিবছর দেশে প্রায় ৩ লক্ষ লোক এ সমস্ত রোগে মৃত্যুবরণ করে এবং ৩ লক্ষাধিক লোক ক্যান্সার, কিডনি , লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড, জন্মগত হৃদরোগ ও থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অর্থের অভাবে এসব রোগে আক্রান্ত রোগীরা যেমনি ধুঁকে ধুঁকে মারা যায়, তেমনি তার পরিবার চিকিৎসার ব্যয় বহন করে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সমাজসেবা অধিদফতরের মাধ্যমে এ সকল অসহায় ক্যান্সার, কিডনি এবং লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত গরীব রোগীদেরকে এককালীন ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করার লক্ষ্যে সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতায় এ কর্মসূচিটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।

 

চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি:

চা শিল্প বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প। জাতীয় অর্থনীতিতে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বাংলাদেশের চা উৎপাদনের পরিমাণ বছরে প্রায় ৯৬.০৭ মিলিয়ন কেজি এবং এখান থেকে চা রপ্তানি করা হয় ২৫টি দেশে। এই চা উৎপাদনের যারা সরাসরি জড়িত তারাই চা-শ্রমিক। কিন্তু চা-শ্রমিকরা সকল নাগরিক সুবিধা ভোগের অধিকার সমভাবে প্রাপ্য হলেও তারা পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে বৈষম্যের শিকার বলে প্রতিয়মান। তাদের প্রতি সদয় আচরণ ও তাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হওয়া পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, সকলের দায়িত্ব। অবহেলিত ও অনগ্রসর এ জনগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ, তাদের  সামাজিক ন্যায় বিচার নিশ্চিতকরণ, পারিবারিক ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতায় ‘চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রম’ গ্রহণ করেছে।

 

প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ:

প্রতিবন্ধিতা জীববৈচিত্রের একটি অংশ। সকল প্রতিবন্ধিতা দৃশ্যমান নয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধিতা দীর্ঘস্থায়ীও নয়। বরং বিভিন্ন ক্ষেত্রে অস্থায়ী প্রতিবন্ধিতা দেখা যায়। এছাড়া প্রতিবন্ধিতার মাত্রাগত তারতম্যও বিদ্যমান। বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রতিবন্ধীব্যক্তি রয়েছে। প্রতিবন্ধীব্যক্তিবর্গের মধ্যে বেশিরভাগই দারিদ্র্যের শিকার তথা নিম্নআয়ভুক্ত বলে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়। প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর দরিদ্রতা নিরসন ও জীবনমান উন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ এখন সময়ের দাবী। দারিদ্র্য নিরসন ও জীবনমান উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন তাদের উপযোগী চিকিৎসা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করে লক্ষ্যভিত্তিক পরিকল্পিত কার্যক্রম গ্রহণ। এ লক্ষ্যে প্রতিবন্ধিতার ধরন চিহ্নিতকরণ, মাত্রা নিরূপণ ও কারণ নির্দিষ্টপূর্বক প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী’র সঠিক পরিসংখ্যান নির্ণয়ের নিমিত্ত দেশব্যাপী  ‘প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ জরিপ কর্মসূচি’ গ্রহণ করা হয়

 

হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি:

হিজড়া সম্প্রদায় বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার একটি ক্ষুদ্র অংশ। আবহমানকাল থেকেই এ জনগোষ্ঠী অবহেলিত ও অনগ্রসর। এ লক্ষ্যে এ জনগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ, তাদের জন্য সামাজিক ন্যায় বিচার নিশ্চিতকরণ, তাদের পারিবারিক, আর্থসামাজিক, শিক্ষা ব্যবস্থা, বাসস্থান, জীবনমান উন্নয়ন এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ সর্বোপরি তাদেরকে সমাজের মূল স্রোতধারায় এনে দেশের সার্বিক উন্নয়নে তাদের সম্পৃক্তকরণের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতায় ২০১২-১৩ অর্থবছরে ‘হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি’ বাস্তবায়ন শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২১ টি জেলায় তা সম্প্রসারণ করা হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছর হতে ৬৪টি জেলায় হিজড়া জনগোষ্ঠীর ভাতা, শিক্ষা উপবৃত্তি এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রতিবছরই এ কার্যক্রমের আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 

বেদে জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি:

বেদে জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার একটি ক্ষুদ্র অংশ। সমাজসেবা অধিদফতরের জরিপমতে বাংলাদেশে বেদে জনগোষ্ঠী প্রায় ৭৫০০০ জন।  বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন তথা এ জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করতে বর্তমান সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। ২০১২-১৩ অর্থবছর হতে ২০১৮-১৯ পর্যন্ত বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি দুটি একত্রে ছিল। ২০১৯-২০ অর্থবছরে  এ কর্মসূচি পৃথক হয়ে "বেদে জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি "নামে স্বতন্ত্র কর্মসূচি  হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে।

 

ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান:

দেশে দারিদ্র্য নিরসনে সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন এবং ভিক্ষাবৃত্তির মত অমর্যাদাকর পেশা থেকে মানুষকে নিবৃত করার লক্ষ্যে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য সরকারের রাজস্ব খাতের অর্থায়নে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ‘‘ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান’’ শীর্ষক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আগস্ট/২০১০ খ্রিঃ হতে কর্মসূচি’র কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১০ সাল হতে ভিক্ষুক পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হলেও তা তেমন ব্যাপকতা পায়নি। বর্তমান জনবান্ধব সরকার ভিক্ষাবৃত্তির মত সামাজিক ব্যধিকে চিরতরে নির্মূলের বিষয়ে অত্যন্ত আন্তরিক।

 

অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি:

অনগ্রসর জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার একটি ক্ষুদ্র অংশ। সমাজসেবা অধিদফতরের জরিপমতে বাংলাদেশে অনগ্রসর জনগোষ্ঠী প্রায় ১৪,৯০,০০০ জন। অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন তথা এ জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করতে বর্তমান সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। নিয়েছে। ২০১২-১৩ অর্থবছর হতে ২০১৮-১৯ পর্যন্ত বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি দুটি একত্রে ছিল। ২০১৯-২০ অর্থবছরে  এ কর্মসূচি পৃথক হয়ে "অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি "নামে স্বতন্ত্র কর্মসূচি  হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থবছর হতে এ কার্যক্রমের বিশেষ ভাতা ও শিক্ষা উপবৃত্তির নগদ সহায়তায় জিটুপি পদ্ধতিতে উপকারভোগীর মোবাইল হিসাবে প্রেরণ করা হচ্ছে।

 

মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস (এম এফ এস):

মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস (এম এফ এস) হল এমন একটি পদ্ধতি, যে পদ্ধতিতে প্রোভাইডারদের নগদ ও বিকাশ এবং এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে (জি টু পি) গভর্ণমেন্ট টু পারসন পদ্ধতিতে ভাতা প্রদান করা হয়।

উল্লেখিত সকল কর্মসূচী ও ভাতা বাবদ প্রদেয় অর্থ গ্রাহককে মোবাইল ব্যাংকিং বা গ্রাহকের হয়ে গ্রাহকের আত্মীয় বা পরিচিত কারো মোবাইল এর মাধ্যমে প্রদান করে আসছে। ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে বয়স্ক ভাতার কর্মসূচীর আংশিক এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছিল এবং সফলও হয়েছিল। বর্তমানে সকল উপকারভোগীদেরকে মোবাইল ফিনাঞ্চিয়াল সার্ভিস (এম এফ এস) প্রোভাইডারদের নগদ ও বিকাশ এবং এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে (জি টু পি) গভর্ণমেন্ট টু পারসন পদ্ধতিতে ভাতা প্রদান করা হয়।

অনেক সময় গ্রাহকরা/উপকারভোগীরা প্রতারনা হয়ে আসছে। যেহেতু উপকারভুগিরা বেশিরভাগ-ই অসচ্চল ও গরিব অনেকের মোবাইল কিনার সামর্থ্য থাকেনা আর এই সুযোগটাকেই কাজে লাগিয়ে প্রতারনা করে আসছে প্রতারক চক্র। এতে করে উপকারভুগি তার প্রাপ্ত সেবা/ সুজুগ থেকে বঞ্চিত হয় এবং পাশাপাশি সরকারেরও বদনাম হয়।

এমতবস্তাই সমাজসেবা অধিদপ্তর নিম্ন লিখিত বিষয়াদির প্রতি জোর দেওয়ার জন্য উপকারভুগিদের এবং তাঁদের সাথে সংশ্লিষ্ট বেক্তিবরগএর প্রতি অনরুধ জানিয়েছে।

 

প্রতারণা থেকে বাঁচার উপায়:

১। সাধ্যের মধ্যে নিজের জন্য একটা মোবাইল এর ব্যবস্থা করা এবং নিজের ফোন নাম্বার দিয়ে নিবন্ধন করা।

২। নিজের মোবাইল বা সিম না থাকলে পরিবারের নিকট আত্মীয় (ভাই/বোন/বাবা/মা) ছাড়া অন্য কারো নম্বর/মোবাইল দিয়ে নিবন্ধন না করা।

৩। কোন মতেই কখনো কারো সাথে পিন/পাস ওয়ার্ড/ও টি পি শেয়ার না করা। মনে রাখতে হবে সরকার কিংবা বিকাশ/নগদের সাথে সংশ্লিষ্ট কেউ কখনো পিন/পাস ওয়ার্ড জানতে চাইবেনা।

৪। নির্দিষ্ট সময় পর পর নিজ মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবের পিন/পাস ওয়ার্ড পরিবর্তন করা।

৫। প্রতারনার শিকার হয়েছেন সন্দেহ হওয়া মাত্রই গ্রাহককে সংশ্লিষ্ট প্রোভাইডার এর কল সেন্টার বা গ্রাহক সেবা কেন্দ্রে অভিযোগ  করতে হবে।

 

#জরুরী_সহায়তার জন্য_যোগাযোগ করুন:

জাতীয় জরুরী পরিষেবা - ৯৯৯

UNHCR হটলাইন (শিবিরে রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা) - ১৬৬৭০

 

আরো তথ্য বা কোন নির্দিষ্ট তথ্যের জন্য, আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন -

ইমেইল: Info.Sheba@rescue.org                          |                      হোয়াটসঅ্যাপ: ০১৮১০০০৮৫০০ 01810008500

ফেসবুক: facebook.com/Signpost.Infosheba